মেয়েদের মনবোঝা, নয়রে নয় সোজা (একটি সুন্দর ঘটনা)







#Photos: Our family is a circle of strength, founded on faith, joined by love and kept by God together, forever.
#With sweet cute little big sisters SUMI, MIM, NANI, NANA.
#Captured by Moly aunty

একটি সুন্দর ঘটনা

কখনও ভাবিনি নিজের ব্যাক্তিগত জগতের কোন ঘটনা এভাবে প্রকাশ করবো। কিন্তু কি করবেন, মাঝে মাঝে আপনাকে ”আউট অফ দ্যা বক্স” চিন্তা করতে হয়। যাই হোক শুরু যখন করেছি তখন বলেই ফেলি।

১৮-০৫-২০১৬| বুধবার, সকালে গেলাম এক বন্ধুর বাড়ি। রাজশাহীর মোহনপুরে। বিকেলে বন্ধুর সাথে মটরসাইকেলে বের হলাম, যাবো মোহনপুর থানায়। শফিক ভাই এখানে নতুন পোস্টিং পেয়েছে। মুলত তার সাথে দেখা করতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তার মাঝে দেখি বিরাটকায় একটা গাছ ভেঙ্গে পড়ে থাকার কারনে সব গাড়ি চলাচল বন্ধ। প্রায় ৪০/৫০ টি গাড়ি (বাস, ট্রাক) আটকা পড়ে আছে।

ওকে নামিয়ে দিয়ে বললাম, ”তুই হেটে পার হ, আমি গাড়ি নিয়ে পার হচ্ছি।”

গাছের ফাঁক গলে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাবো এই সময় দেখি একটা মেয়ে খুব উচ্চ স্বরে ফোনে কথা বলছে। চোখেমুখে কান্না কান্না ভাব।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, " কি সমস্যা আপনার? কেউ অসুস্থ, ইমারজেন্সি?"

উনি কাঁদ কাঁদ স্বরে বল্লেন, " আমাকে এক্ষুনি হাসপাতালে (প্রাইভেট ক্লিনিক) যেতে হবে। খুবই জরুরি।"

আমি ভাবলাম- নিশ্চয়ই কোন ইমারজেন্সি কেস।

বললাম," যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আাপনি আমার সাথে যেতে পারেন, কারন আামি ওই দিকেই যাচ্ছিলাম। আপনাকে হাসপাতালে নামিয়ে দেবো। আর রাস্তার যা অবস্থা তাতে আরও ৩/৪ ঘন্টা লেট হবে গাছ সরাতে।"

ভাবলাম মেয়েরাতো বেশি ফ্রাঙ্ক ছেলেদের বেশি ভয় পায়। সো, যাওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটাকে আমার বাইকের পেছনে আবিস্কার করলাম।

বন্ধুকে বললাম, ”তুই যা আমি আইতাছি”।

বন্ধুরা এমনই হয়। হারামির জাত হইলেও সিচুয়েশন বোঝে। প্রয়োজনে ঠিকই বন্ধুর জন্য জান দিতে প্রস্তুত আবার পেছনে কলকাঠিও নাড়ে।

কি আর করার, বাইক নিয়ে ছুটলাম হসপাতালের উদ্দেশ্যে। জীবনে এই প্রথম একটা ইয়াং সমবয়সী মেয়ে আমার বাইকের পেছনে বসা। নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে ইচ্ছে করছে। পুরো রাস্তা মেয়েটা একটা কথাও বললনা।

হাসপাতালে নামতেই একজন এসে বলল, " তাড়াতাড়ি আসেন, ইমারজেন্সি"।

মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে নেমে কিছুদুর গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, "আপনার যদি খুব তাড়া না থাকে তাহলে দু'টো মিনিট বসবেন প্লিজ।"

আমি বললাম, "ঠিক আছে আপনি যান আমি আছি।"

জীবনে প্রথম একটা মেয়ের অপেক্ষায় বসে আছি। আগের যুগে অপেক্ষা মানেই ছিল ভয়ংকর বিরক্তির সময়। আর এখন অপেক্ষায় মনের মাধুর্যতা বৃদ্ধি পায়, যার ক্রেডিট গোজ টু ফেসবুক। একটা স্মার্টফোন হাতে থাকলে আপনি ”রিপ-ভ্যান-উইংকেল” হলেও হতে পারেন। হয়তো ফেসবুক বন্ধকরে উঠে দেখলেন আপনার বয়স ২০ থেকে ৫০ হয়ে গেছে। বড়বড় দাড়ি আর চুল গজিয়েছে। আরও কত কি জীবনে ঘটার বাকি আছে আল্লাহই জানে।

ঠিক ১৬ মিনিটের মাথায় মেয়েটা আসলো।

বলল, " সরি, আমার জন্য আপনাকে আজ অনেক কষ্ট করতে হল। তবে আজ আপনি দু'টো ভাল কাজ করেছেন- এইমাত্র যে রুগীটা আসলো তার জীবন বাঁচিয়েছেন আর আমার চাকরিটা বাঁচিয়েছেন।"

আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আমি আপনার চাকরি বাঁচালাম কিভাবে? আপনি কি এখানে চাকরি করেন না কী?"

মেয়েটি একটা ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল, " জী। আমি এখানে নার্সের চাকরি করি। সিনিয়র স্টাফ নার্স। কিন্ত আম্মুর অসুস্থতার জন্য আমি গত পাঁচ দিন আসতে পারিনি। রুলস্ মোতাবেক কেউ টানা ৬ দিন অফিস টাইমে অনুপস্থিত থাকলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। আজ ছিল আমার ষষ্ঠ দিন। আর, একটু আগে যে রুগীর ডেলিভারি করালাম তার অবস্থা ছিল খুবই ইমারজেন্সি। হয়তো দু' মিনিট দেরি করলে আর বাঁচানো যেতো না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।"

আমি বললাম, " ধন্যবাদ দিয়ে আমার পূণ্য টুকু কেড়ে নিতে চান না কী? চাইলেও দেব না।"

মেয়েটা সেই ভয়ংকর হাসি দিয়ে বলল, " না, আপনার কোন কিছুই কেড়ে নেবো না। আপনি বসুন আমি চা'য়ের অর্ডার দেই।"

আমি বললাম, " আজ নয় আর একদিন। আমার হাতে আর একদম সময় নেই। যে কাজে এসেিছলাম সে কাজটা পড়ে আছে। আসি। ভাল থাকবেন।"

আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটাও বলল, " ঠিক আছে। আপনিও ভালো থাকবেন। আর এভাবে মানুষের উপকার করবেন।"

আমি একটা ভূবন ভোলানো হাসি দিয়ে চলে এলাম। বাইকে বাড়ির পথে যাচ্ছি আর ভাবছি, মেয়েরা এমন আজব কেন? আমার ফোন নম্বর না চাইতে পারে কিন্তু আমার নামটাতো জানতে চাওয়া উচিত ছিল তাই না? আসলেই "মেয়েদের মনবোঝা, নয়রে নয় সোজা" গানটার যৌক্তকতা আছে।

ঘটনাটিকে আমি এড়িয়েই যেতাম, যদি আজ (২৬-০৫-২০১৬) মেয়েটা আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠাতো। এতোটা বিস্মিত কখনোও হইনি।

বিশ্বাস করেন আমি আমার নামটা পর্যন্ত তাকে বলিনি। তার পরও মেয়েটি আমকে খুঁজে বের করে ফেলেছে।

ফেসবুকে জানতে চাইলাম, " আপনি আমাকে খুঁজে বের করলেন কিভাবে? আপনি তো আমার নামও জানেন না।"

মেয়েটি একটা হাসির ইমোটিকন দিয়ে লিখলো, " এইটা আপনাকে বলবো না। এইটা গোপন থাক।"

আমিও আর জানতে চাইনি। কি হবে জেনে!! হুমায়ুন আহমেদের একটা বই পড়েছিলাম ”মিসির আলি UNSOLVED” সেখানে দু’টো ঘটনা ছিলো অনেকটা এই ঘটনার মত, যা মিসির আলি সমাধান করতে পারেন নি। থাক না কিছু বিষয় গোপন।

তবে হ্যাঁ, আসলেই "মেয়েদের মনবোঝা, নয়রে নয় সোজা" গানটার যৌক্তকতা আছে।

#(বি.দ্র.: কেউ উল্টাপাল্টা কিছু ভাববেন না)

‪#‎IDidNotTagSuchBigPostEver‬
‪#‎ThisIsNotFunny‬
#28/05/2016
‪#‎Reza‬

Popular posts from this blog

সেকায়েপ শিক্ষকদের দৈন্যদশা-সমকাল

উদ্যোগ নেওয়া জরুরি নয় কী?- কালের কন্ঠ

একদিন স্বপ্নের দিন