উদ্যোগ নেওয়া জরুরি নয় কী?- কালের কন্ঠ
দৈনিক কালের কন্ঠ
২০ নভেম্বর, ২০১৭
উদ্যোগ
নেওয়া জরুরি নয় কী?
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি
কমিশন (বিটিআরসি) এর উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে এক্সেসিবল এমন সকল নগ্ন ভিডিও ও ছবি প্রদর্শনকারী
ওয়েবসাইট বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয় গত কয়েক বছর আগে। কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার হচ্ছে,
যেসকল ওয়েবসাইট বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার হয় সেসকল ওয়েবসাইটের অধিকাংশ আজও বহালতবিয়তে
এক্সেসিবল রয়েগেছে এবং যথারীতি বাংলাদেশের বখে যাওয়া পুরুষ মানুষ নামের ধর্ষকেরা ধর্ষণের
ভিডিও চিত্র ধারন করে এসকল ওয়েবসাইটে আপলোড করছে নিয়মিত, যা মুহুর্তে পৌঁছে দিচ্ছে
সারা পৃথিবীতে। তাই একবার আপলোড করা ভিডিও আর মুছেফেলা সম্ভমপর হয় না। ফলশ্রুতিতে দেখা
যায় যে, মেয়েটি ধর্ষণের পর বেঁচে থাকলেও কোনদিন সে সমাজে মাথা আর উঁচু করতে পারেনা
অথবা নিয়মিত ঐ ভিডিও দ্বারা তাকে ব্ল্যাকমেইলড হতে হয়।
এমন ঘটনার ধারাবাহিকতা আমরা নিয়মিত
দেখি। কিছুদিন আগে রূপা নামের মেয়েটিকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে ঘাড় মটকে হত্যার ঘটানায়
ধর্ষকদের মোটিভে নতুন মোড় দেখা যায়। দর্ষকরা এখন আর শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে
না বরং যাতে মেয়েটি আদালতে মামলায় না লড়তে পারে সে জন্য তাদের হত্যা করাকেই শ্রেয় মনে
করছে তারা। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের এটা সেখায় যে, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোর
যথাযথ প্রযোগ হচ্ছে না। ধর্ষণবিরোধী আইন এবং বিটিআরসির পদক্ষেপে যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর রয়েছে।
সার্চ জায়ান্ট গুগল এর মাধ্যমে সার্চ করলে শতশত নগ্ন ভিডিও ও ছবি সম্বলিত ওয়েবসাইট
পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলোতে অনায়াসে প্রবেশ করে ভিডিও দেখা ও আপলোড করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে এর বিকল্প হিসেবে কিশোর
বয়সের ছেলে-মেয়েদের কাছে বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে "চটি গল্প" নামের এক
বিশেষ ধরনের গল্প। ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নগ্নতা ও যৌনতার
বিভিন্ন রকম গল্পিক বর্ণনাগুলোই "চটি গল্প" নামে পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্ব অন্তর্জালের
শতশত ওয়েবসাইট আজ এই "চটি" গল্পের ভান্ডারে পরিনত হয়েছে। যার বৃহৎ পাঠক হলো
উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা, বিশেষ করে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর ও যুবকেরা। এই সাইটগুলোতে
বারবার প্রবেশ করে নিয়মিত এসব নগ্নতার কাহিনী পড়ার মাধ্যমে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর
নষ্ট হচ্ছে তাদের মুল্যবোধ ও মানবতা। বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা আর ধর্ষণ প্রবণতা। এসব
"চটি" গল্পের প্রধান উৎস হলো বাংলাদেশ থেকে তৈরীকৃত ও নিয়ন্ত্রিত কিছু ব্লগ
ওয়েবসাইট। এসব ব্লগের অধিকাংশই ব্যক্তিক এবং কিছু আছে কমিউনিটি ভিত্তিক। এগুলো বাংলায়
লেখা এবং ছবি সংযোজিত থাকে।
দেশের যুব সমাজের নৈতিক
অধঃপতন রোধ করতে এবং ধর্ষণমাত্রা কমাতে এসকল অনলাইন ভিত্তিক সার্ভার যত দ্রুত সম্ভব
বন্ধ করা জরুরি। নগ্ন তথ্য, গল্প ও ছবি সম্বলিত ব্লগ এবং নগ্ন ভিডিও চিত্র সম্বলিত
ওয়েবসাইট আজকের যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং ধারাবাহিক ধর্ষণ প্রবনতা বৃদ্ধির জন্য
বহুলাংশে দায়ী। বিশেষ করে শিশুথেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার হতে স্মার্টফোন সুলভ
হওয়ায় এবং সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া আরও জরুরি
হয়ে পড়েছে। তাই উল্লিখিত বিষয়ে বিটিআরসির কার্যকারিতা বাড়াতে এবং অণলাইন নজরদারি তৈরি
করতে যথাযথ কতৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।
মোঃ রেজাউল হক
রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী।
Comments
Post a Comment